চারবার তিনি ইতালির প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। প্রতিবারই তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ বলেই মনে হলেও আবার তিনি ফিরে আসতে পেরেছিলেন।ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বেরলুসকোনি। ছবি: রয়টার্সPublished : 12 June 2023, 10:11 PMUpdated : 12 June 2023, 10:11 PMইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বেরলুসকোনি ব্যবসা,সম্প্রচারমাধ্যম এবং রাজনীতিতে ছিলেন বহুল পরিচিত একজন ব্যক্তিত্ব। তার আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের কারণে দুর্নীতির অভযোগ এবং কপটাচারের পরও তিনি ভোটারদের সমর্থন পেয়েছেন বারবার।
চারবার তিনি ইতালির প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। প্রতিবারই তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ বলেই মনে হয়েছিল। কিন্তু সমালোচকদের গোলকধাঁধাঁয় ফেলে তিনি আবার ফিরে আসতে পেরেছিলেন।
কর জালিয়াতির কারণে ৯ বছর সরকারি পদে নিষিদ্ধ থাকার পরও তিনি পার্লামেন্টে ফিরে এসেছিলেন। ইতালির সিনেটে নির্বাচিত হয়েছিলেন ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে। ৮৬ বছরে পা দেওয়ার আগে দিয়ে।
কিন্তু প্রায়শই তার ব্যক্তিগত জীবন- সুন্দরী তরুণী নারীদের ঘিরে তার বিচরণের প্রবণতা এবং যৌন কেলেঙ্কারি- বিশ্বব্যাপী খবরের শিরোনাম হয়েছে।
৮৬ বছরে মারা যাওয়া বেরলুসকোনি ছিলেন একজন মেডিয়া মোগল,ফুটবল ক্লাবের মালিক এবং ধনকুবের ব্যবসায়ী। যিনি কখনও রাজনীতি ছাড়েননি।
কয়েকদশক ধরে তিনি গড়ে তুলতে চেষ্টা করেছিলেন ইতালির ভাবমূর্তি। রাজনীতির পাশাপাশি যৌনতা, খেলা, দুর্নীতি নিয়ে বেরলুসকোনির বিচিত্র জীবনচিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছে বিবিসি:
মিলানের ধনকুবের:
বেরলুসকোনির জন্ম একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে ১৯৩৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বরে মিলানে। শহরের বাইরে একটি গ্রামে বেড়ে ওঠেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে পড়াশুনার পাশাপাশি একজন গায়ক হিসাবেও ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছিলেন তিনি। গান গাইতেন নাইট ক্লাব এবং প্রমোদতরীতে।
ব্যবসায় তার পদচারণা শুরু ভ্যাকুয়াম ক্লিনার এবং ছাত্রদের জন্য লেখা নিবন্ধ বিক্রির মধ্য দিয়ে। পরে তিনি একটি আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
পরবর্তী সময়ে কয়েকটি টিভি চ্যানেলেরও মালিক হন তিনি। এর মধ্য দিয়ে বেরলুসকোনি ইতালির শীর্ষস্থানীয় ধনীদের কাতারে নাম লেখান। বেরলুসকোনি তার মৃত্যুর সময় ছিলেন ইতালির সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি।
তার এই সম্পদের কিছুটা ফুটবল ক্লাব এসি মিলান কে দেউলিয়াত্বের হাত থেকে রক্ষায় কাজে লেগেছে। কিংবদন্তি এই ফুটবল ক্লাবের মালিকানার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি লাভ করেছিলেন বেরলুসকোনি।
রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং দুর্নীতির তদন্ত:
বারবার আদালতে মামলা-মোকদ্দমা লড়া এবং রাজনীতিতে জনপ্রিয়তা ধরে রাখায় বেরলুসকোনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তিনি প্রায়ই তাকে শিকার বানানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করতেন, বিশেষ করে মিলানের কৌসুঁলিদের বিরুদ্ধে।
বছরের পর বছর ধরে তার বিরুদ্ধে তহবিল তছরুপ করা, কর জালিয়াতি, বিচারককে ঘুষ দেওয়ার চেষ্টাসহ আরও নানা অভিযোগ আনা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই তিনি অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন কিংবা দোষী সাব্যস্ত হয়েও সাজা থেকে পার পেয়ে গেছেন।
১৯৯০ এর দশকে বেরলুসকোনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং খুব দ্রুতই একজন কৌশলী এবং ক্যারিশম্যাটিক প্রচারক হিসাবে নাম কুড়ান।
ইতালির রাজনীতিতে তিনি ছিলেন একজন মেরুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। তার ব্যবসায়িক দূরদর্শীতা এবং জনগণের কাছে তার আবেদনের জন্য সমর্থকদের কাছে তিনি ছিলেন প্রশংসনীয়।
কিন্তু অন্যদিকে, দুর্নীতির অভিযোগ, যৌন কেলেঙ্কারি এবং আইনের শাসনের প্রতি অমর্যাদার কারণে সমালোচকদের কাছে বেরলুসকোনি ছিলেন নিন্দনীয় ব্যক্তিত্ব।
গোটা রাজনৈতিক জীবনে বেরলুসকোনি অনেক আইনি সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। দুর্নীতি,কর জালিয়াতির মতো অভিযোগের পাশাপাশি অপ্রাপ্তবয়স্ক পতিতার সঙ্গে তার যৌন সংসর্গ নিয়েও কম জলঘোলা হয়নি। তার বেশ কয়েকটি ব্যবসা নিয়ে তদন্তও হয়েছে।
কিন্তু কয়েকবার দোষী সাব্যস্ত হয়েও তিনি বয়সের কারণে এবং আইনি প্রক্রিয়া শুরুর সময় পেরিয়ে যাওয়ার কারণে সাজা এড়িয়ে যেতে পেরেছেন।
একবার ক্ষমতায় থাকাকালে বেরলুসকোনি সরকার ক্ষমতার শীর্ষ পদে থাকা ব্যক্তিদের জন্য বিচারে ছাড় দেওয়ার আইন পাস করেছিল। কিন্তু সাংবিধানিক আদালত সেটি পরে তুলে দেয়।
বুঙ্গা-বুঙ্গা পার্টি ও প্রকাশ্য ব্যক্তিগত জীবন:
রাজনীতির বাইরে ব্যক্তিগত জীবন এবং নারীদের নিয়ে তার আগ্রহের কারণে বেরলুসকোনি অনেকবার খবরের শিরোনাম হয়েছেন। যেগুলো প্রায়শই প্রকাশ্যে এসেছে।
এ নিয়ে তিনি কোনও রাখঢাকও করেননি। নিজেকে কমবয়স দেখাতে বেরলুসকোনির প্লাস্টিক সার্জারি করা কিংবা চুল ট্রান্সপ্লান্ট করার কথা সর্বজনবিদিত।
শো গার্লদের নিয়ে নিজের ভিলায় বুঙ্গা-বুঙ্গা পার্টি করে বড় ধরনের কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছিলেন বেরলুসকোনি। ২০১৩ সালে ক্ষমতার অপব্যবহার, এবং রুবি হার্ট স্টেলার নামের এক নারীকে যৌনতার জন্য অর্থ দেওয়ার অভিযোগে বেরলুসকোনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। তবে পরের বছরেই সেই রায় উল্টে যায়।
বারবার প্রধানমন্ত্রীত্বে ফেরা:
নানা আইনি প্যাচে পড়েও বেরলুসকোনি ইতালির রাজনীতিতে মূল চালিকাশক্তি হয়েই বিরাজ করেছেন। ইতালিতে জর্জিয়া মেলোনির নেতৃত্বাধীন বর্তমান জোট সরকারেও তিনি ছিলেন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব।
বেরলুসকোনির প্রথম কোয়ালিশন মাত্র কয়েকমাস টিকেছিল। ১৯৯৬ সালে তিনি বামপন্থিদের কাছে হেরেছিলেন। কিন্তু তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার তখন কেবল শুরু হয়েছিল।
২০০১ সালে বেরলুসকোনি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ফিরে আসেন। নতুন কোয়ালিশন হাউজ অব ফ্রিডমের প্রধান হন তিনি।
কিনতু ইতালির অর্থনৈতিক অবস্থা তখন দুর্দশাগ্রস্ত ছিল। বেরলুসকোনি তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেননি। ফলে ২০০৬ সালে বামদের কাছে তিনি হেরে যান। কিন্তু ২০০৮ সালে আবার জয়লাভ করেন।
এভাবে ২০১১ সাল পর্যন্ত চারবার সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বেরলুসকোনি।
কিন্তু ২০১১ সালের শেষের দিকে তার ক্ষমতা চলে যায়। ২০১২ সালে কর জালিয়াতির কারণে তার চারবছরের জেল হয় এবং সরকারি পদে তিনি নিষিদ্ধ হন। বেরলুসকোনি নিজেকে নির্দোষ বলে ঘোষণা করেছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে বিচারবিভাগীয় অভ্যুত্থান হওয়ার কথা বলেছিলেন।
কিন্তু জাতীয় বাজেট নিয়ে নানা সমস্যা এবং ব্যক্তিগত নানা কেলেঙ্কারির কারণে বেরলুসকোনির পিপল অব ফ্রিডম পার্টি ২০১১ সালের স্থানীয় নির্বাচনে ভাল করতে পারেনি। নিজ শহরে মিলানেও হেরে যায় দলটি।
তবে বেরলুসকোনির জনপ্রিয়তা তখনও ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তার দল ভেঙে যায় এবং বেরলুসকোনি তার দলকে আবার আদি নাম ফোরজা ইতালিয়া হিসাবেই পুনরায় চালু করেন।
বেরলুসকোনি মধ্য ডানপন্থি এই ফোরজা ইতালিয়ার নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন। গত সেপ্টেম্বরে নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির নেতৃত্বে জোট সরকারে যোগ দেয় দলটি। সে সময় বেরলুসকোনি ইতালির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে আপনা থেকেই নির্বাচিত হয়ে যান।
বেরলুসকোনির মৃত্যুতে বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইতালির প্রতিরক্ষামন্ত্রী। ‘একটি যুগের অবসান ঘটেছে’, এক টুইটার পোস্টে লিখেছেন তিনি।
তবে বেরলুসকোনির বিচিত্র জীবনধারা আগামী দিনগুলোতে বিতর্কের বিষয় হয়েই থেকে যাবে বলে অভিমত বিশ্লেষকদের। কেউ তাকে দেখবে মুক্ত উদ্যোগের চ্যাম্পিয়ন এবং ইতালির মূল্যবোধের রক্ষক হিসাবে। আবার কেউ দেখবে দুর্নীতি আর নৈতিক অবক্ষয়ের প্রতীক হিসাবে।
ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বেরলুসকোনি ব্যবসা,সম্প্রচারমাধ্যম এবং রাজনীতিতে ছিলেন বহুল পরিচিত একজন ব্যক্তিত্ব। তার আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের কারণে দুর্নীতির অভযোগ এবং কপটাচারের পরও তিনি ভোটারদের সমর্থন পেয়েছেন বারবার।
চারবার তিনি ইতালির প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। প্রতিবারই তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ বলেই মনে হয়েছিল। কিন্তু সমালোচকদের গোলকধাঁধাঁয় ফেলে তিনি আবার ফিরে আসতে পেরেছিলেন।
কর জালিয়াতির কারণে ৯ বছর সরকারি পদে নিষিদ্ধ থাকার পরও তিনি পার্লামেন্টে ফিরে এসেছিলেন। ইতালির সিনেটে নির্বাচিত হয়েছিলেন ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে। ৮৬ বছরে পা দেওয়ার আগে দিয়ে।
কিন্তু প্রায়শই তার ব্যক্তিগত জীবন- সুন্দরী তরুণী নারীদের ঘিরে তার বিচরণের প্রবণতা এবং যৌন কেলেঙ্কারি- বিশ্বব্যাপী খবরের শিরোনাম হয়েছে।
৮৬ বছরে মারা যাওয়া বেরলুসকোনি ছিলেন একজন মেডিয়া মোগল,ফুটবল ক্লাবের মালিক এবং ধনকুবের ব্যবসায়ী। যিনি কখনও রাজনীতি ছাড়েননি।
কয়েকদশক ধরে তিনি গড়ে তুলতে চেষ্টা করেছিলেন ইতালির ভাবমূর্তি। রাজনীতির পাশাপাশি যৌনতা, খেলা, দুর্নীতি নিয়ে বেরলুসকোনির বিচিত্র জীবনচিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছে বিবিসি:
মিলানের ধনকুবের:
বেরলুসকোনির জন্ম একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে ১৯৩৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বরে মিলানে। শহরের বাইরে একটি গ্রামে বেড়ে ওঠেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে পড়াশুনার পাশাপাশি একজন গায়ক হিসাবেও ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছিলেন তিনি। গান গাইতেন নাইট ক্লাব এবং প্রমোদতরীতে।
ব্যবসায় তার পদচারণা শুরু ভ্যাকুয়াম ক্লিনার এবং ছাত্রদের জন্য লেখা নিবন্ধ বিক্রির মধ্য দিয়ে। পরে তিনি একটি আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
পরবর্তী সময়ে কয়েকটি টিভি চ্যানেলেরও মালিক হন তিনি। এর মধ্য দিয়ে বেরলুসকোনি ইতালির শীর্ষস্থানীয় ধনীদের কাতারে নাম লেখান। বেরলুসকোনি তার মৃত্যুর সময় ছিলেন ইতালির সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি।
তার এই সম্পদের কিছুটা ফুটবল ক্লাব এসি মিলান কে দেউলিয়াত্বের হাত থেকে রক্ষায় কাজে লেগেছে। কিংবদন্তি এই ফুটবল ক্লাবের মালিকানার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি লাভ করেছিলেন বেরলুসকোনি।
রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং দুর্নীতির তদন্ত:
বারবার আদালতে মামলা-মোকদ্দমা লড়া এবং রাজনীতিতে জনপ্রিয়তা ধরে রাখায় বেরলুসকোনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তিনি প্রায়ই তাকে শিকার বানানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করতেন, বিশেষ করে মিলানের কৌসুঁলিদের বিরুদ্ধে।
বছরের পর বছর ধরে তার বিরুদ্ধে তহবিল তছরুপ করা, কর জালিয়াতি, বিচারককে ঘুষ দেওয়ার চেষ্টাসহ আরও নানা অভিযোগ আনা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই তিনি অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন কিংবা দোষী সাব্যস্ত হয়েও সাজা থেকে পার পেয়ে গেছেন।
১৯৯০ এর দশকে বেরলুসকোনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং খুব দ্রুতই একজন কৌশলী এবং ক্যারিশম্যাটিক প্রচারক হিসাবে নাম কুড়ান।
ইতালির রাজনীতিতে তিনি ছিলেন একজন মেরুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। তার ব্যবসায়িক দূরদর্শীতা এবং জনগণের কাছে তার আবেদনের জন্য সমর্থকদের কাছে তিনি ছিলেন প্রশংসনীয়।
কিন্তু অন্যদিকে, দুর্নীতির অভিযোগ, যৌন কেলেঙ্কারি এবং আইনের শাসনের প্রতি অমর্যাদার কারণে সমালোচকদের কাছে বেরলুসকোনি ছিলেন নিন্দনীয় ব্যক্তিত্ব।
গোটা রাজনৈতিক জীবনে বেরলুসকোনি অনেক আইনি সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। দুর্নীতি,কর জালিয়াতির মতো অভিযোগের পাশাপাশি অপ্রাপ্তবয়স্ক পতিতার সঙ্গে তার যৌন সংসর্গ নিয়েও কম জলঘোলা হয়নি। তার বেশ কয়েকটি ব্যবসা নিয়ে তদন্তও হয়েছে।
কিন্তু কয়েকবার দোষী সাব্যস্ত হয়েও তিনি বয়সের কারণে এবং আইনি প্রক্রিয়া শুরুর সময় পেরিয়ে যাওয়ার কারণে সাজা এড়িয়ে যেতে পেরেছেন।
একবার ক্ষমতায় থাকাকালে বেরলুসকোনি সরকার ক্ষমতার শীর্ষ পদে থাকা ব্যক্তিদের জন্য বিচারে ছাড় দেওয়ার আইন পাস করেছিল। কিন্তু সাংবিধানিক আদালত সেটি পরে তুলে দেয়।
বুঙ্গা-বুঙ্গা পার্টি ও প্রকাশ্য ব্যক্তিগত জীবন:
রাজনীতির বাইরে ব্যক্তিগত জীবন এবং নারীদের নিয়ে তার আগ্রহের কারণে বেরলুসকোনি অনেকবার খবরের শিরোনাম হয়েছেন। যেগুলো প্রায়শই প্রকাশ্যে এসেছে।
এ নিয়ে তিনি কোনও রাখঢাকও করেননি। নিজেকে কমবয়স দেখাতে বেরলুসকোনির প্লাস্টিক সার্জারি করা কিংবা চুল ট্রান্সপ্লান্ট করার কথা সর্বজনবিদিত।
শো গার্লদের নিয়ে নিজের ভিলায় বুঙ্গা-বুঙ্গা পার্টি করে বড় ধরনের কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছিলেন বেরলুসকোনি। ২০১৩ সালে ক্ষমতার অপব্যবহার, এবং রুবি হার্ট স্টেলার নামের এক নারীকে যৌনতার জন্য অর্থ দেওয়ার অভিযোগে বেরলুসকোনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। তবে পরের বছরেই সেই রায় উল্টে যায়।
বারবার প্রধানমন্ত্রীত্বে ফেরা:
নানা আইনি প্যাচে পড়েও বেরলুসকোনি ইতালির রাজনীতিতে মূল চালিকাশক্তি হয়েই বিরাজ করেছেন। ইতালিতে জর্জিয়া মেলোনির নেতৃত্বাধীন বর্তমান জোট সরকারেও তিনি ছিলেন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব।
বেরলুসকোনির প্রথম কোয়ালিশন মাত্র কয়েকমাস টিকেছিল। ১৯৯৬ সালে তিনি বামপন্থিদের কাছে হেরেছিলেন। কিন্তু তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার তখন কেবল শুরু হয়েছিল।
২০০১ সালে বেরলুসকোনি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ফিরে আসেন। নতুন কোয়ালিশন হাউজ অব ফ্রিডমের প্রধান হন তিনি।
কিনতু ইতালির অর্থনৈতিক অবস্থা তখন দুর্দশাগ্রস্ত ছিল। বেরলুসকোনি তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেননি। ফলে ২০০৬ সালে বামদের কাছে তিনি হেরে যান। কিন্তু ২০০৮ সালে আবার জয়লাভ করেন।
এভাবে ২০১১ সাল পর্যন্ত চারবার সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বেরলুসকোনি।
কিন্তু ২০১১ সালের শেষের দিকে তার ক্ষমতা চলে যায়। ২০১২ সালে কর জালিয়াতির কারণে তার চারবছরের জেল হয় এবং সরকারি পদে তিনি নিষিদ্ধ হন। বেরলুসকোনি নিজেকে নির্দোষ বলে ঘোষণা করেছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে বিচারবিভাগীয় অভ্যুত্থান হওয়ার কথা বলেছিলেন।
কিন্তু জাতীয় বাজেট নিয়ে নানা সমস্যা এবং ব্যক্তিগত নানা কেলেঙ্কারির কারণে বেরলুসকোনির পিপল অব ফ্রিডম পার্টি ২০১১ সালের স্থানীয় নির্বাচনে ভাল করতে পারেনি। নিজ শহরে মিলানেও হেরে যায় দলটি।
তবে বেরলুসকোনির জনপ্রিয়তা তখনও ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তার দল ভেঙে যায় এবং বেরলুসকোনি তার দলকে আবার আদি নাম ফোরজা ইতালিয়া হিসাবেই পুনরায় চালু করেন।
বেরলুসকোনি মধ্য ডানপন্থি এই ফোরজা ইতালিয়ার নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন। গত সেপ্টেম্বরে নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির নেতৃত্বে জোট সরকারে যোগ দেয় দলটি। সে সময় বেরলুসকোনি ইতালির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে আপনা থেকেই নির্বাচিত হয়ে যান।
বেরলুসকোনির মৃত্যুতে বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইতালির প্রতিরক্ষামন্ত্রী। ‘একটি যুগের অবসান ঘটেছে’, এক টুইটার পোস্টে লিখেছেন তিনি।
তবে বেরলুসকোনির বিচিত্র জীবনধারা আগামী দিনগুলোতে বিতর্কের বিষয় হয়েই থেকে যাবে বলে অভিমত বিশ্লেষকদের। কেউ তাকে দেখবে মুক্ত উদ্যোগের চ্যাম্পিয়ন এবং ইতালির মূল্যবোধের রক্ষক হিসাবে। আবার কেউ দেখবে দুর্নীতি আর নৈতিক অবক্ষয়ের প্রতীক হিসাবে।
0 Comments